ডেক্স রিপোর্টঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দৈনিক খবরপত্র পত্রিকায় কর্মরত কমলগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল বাছিত খাঁন।
জানাগেছে হটাৎ চলন্ত সাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো দা ও চাপাতি দিয়ে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাত্ত জখম করে পালিয়ে যায়। এসময় সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খাঁনের সাথে থাকা হিমেল নামের কমলগঞ্জের আরেক সাংবাদিক পালিয়ে রক্ষা পান।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে দ্রুত নিয়ে আসা হয় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেও শরীরের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক রেফার্ড করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শনিবার ১৩ আগষ্ট দুপুর দেড়টার দিকে মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জ সড়কের উবাহাটা নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় ক্ষোব্ধ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত অপরধিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সাংবাদিক হিমেলকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আব্দুল বাছিত খান গন্তব্যে ফিরছিলেন। হটাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই হেলমেট পরিহিত কয়েকজন সন্ত্রাসী সাইকেল থামাতে বলে, এসময় ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপানো শুরু করলে তিনি দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে পাশের জমিতে পরে যান। সেখানেও সন্ত্রাসীরা একের পর এক কোপাতে থাকে শরীরের নানা জায়গায়। হামলার ভয়াবহতা পেয়ে ভয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন সাথে থাকা হিমেলও। তাঁকে সন্ত্রাসীরা বলতে থাকে পালাবিনা, তোকে কিচ্ছু করবনা, তবে হিমেল তাদের কথায় বিশ্বাস না করে দৌঁড়ে গিয়ে আশপাশের মানুষের সহায়তায় ফের চলে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান সন্ত্রাসীরা আব্দুল বাছিত খানকে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে। এর পর স্থানীয়দের সহায়তায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সাংবাদিক আব্দুল বাছিতের সাথে থাকা সাংবাদিক হিমেলও দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে আহত হন। তার সাথে কথা হয় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সামনে। তাঁর চোখে-মুখে ভয় আর আতঙ্কের চাপ। তিনি জানান, হামলায় অংশ নেয়াদের মুখ ঢাকা ছিলো হেমলেটে, যার কারনে কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
আলোচিত এঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জে কর্মরত সংবাদকর্মীরা ও কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইয়ারদৌস হাসান দুপুরের দিকে দ্রুত সেখানকার হাসপাতালে ছুটে যান। মুঠোফোনে আলাপকালে ওসি ইয়ারদৌস হাসান জানান, অপরাধীরা শনাক্ত,আমরা অভিযানে আছি, দ্রুতই গ্রেফতার হবে।
এদিকে রক্তাক্ত আব্দুল বাছিত খানকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে এমন তথ্যে মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জের সাংবাদিকরাসহ স্বজনেরা বিকাল ৩টার দিকে খবর পেয়ে জড়ো হতে থাকেন হাসপাতালের সামনে। সেখানে গুরুতর আহত আব্দুল বাছিতকে এম্বুল্যন্সে করে নিয়ে আসা হলে সহকর্মীরা কাউকে চেনা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান তাৎক্ষণিক কাউকে চেনা যায় নি। কী কারনে হামলার এই ঘটনা তাও জানা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল বাছিত খানের সাথে থাকা সাংবাদিক মসাহিদ আহমদ জানান, তাঁর অবস্থা আগের থেকেও সঙ্কটাপন্ন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের এলাপাতাড়ি কোঁপে প্রায় বিচ্ছিন্ন শরীরের ডান হাত, হাতটি কোনরকম চামড়ায় ঝুলে আছে । কথাবার্তা বলাও একদম বন্ধ। এসময় তিনি এই সহকর্মীর জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
এদিকে সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খানের উপর সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক।
সাংবাদিক আব্দুল বাছিত খানের উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব, কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিনিটি, মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, কমলগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের একাধিক ইউনিট, আশা করি দ্রুত অপরাধীরা শনাক্ত হবে।
Leave a Reply